স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হাত ধোয়ার বিকল্প নেই
লিগ্যাল ভয়েস ডেস্ক:
হাত ধোয়া কর্মসূচি নতুন কিছু নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৮০০ সালে। ভিয়েনার একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে মাতৃমৃত্যুর হার হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। আতঙ্কিত রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে থাকেন। ওই হাসপাতালে কাজ করতেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ইগনাল সেমেলউইজ। তিনি এর কারণ খুঁজতে লাগলেন অনুসন্ধান করে দেখলেন, নবীন
চিকিৎসকরা অ্যানাটমি ক্লাসে শবব্যবচ্ছেদ করে হাত ভালোভাবে না ধুয়েই প্রসূতি ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা করছেন।
তিনি মতামত দিলেন, এভাবে অপরিষ্কার হাত দিয়ে রোগীদের সংস্পর্শে আসায় সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুর হারও। মৃত্যুহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি হাত ধোয়া কর্মসূচি শুরু করেন, যার ফলে জীবাণু সংক্রমণ কমে যায় এবং মৃত্যুর হার পাঁচগুণ কমে আসে। হাঙ্গেরিয়ান ডা. সেমেলউইজের এই কর্মসূচি হাসপাতালে হাত ধোয়ার গুরুত্বকে প্রমাণ করে দেয়, যা এখন কেবল রোগ প্রতিরোধে হাসপাতালেই সীমাবদ্ধ নয়। বাসাবাড়িসহ স্কুল-কলেজ ও রেস্তোরাঁয় সর্বত্র স্বীকৃত। আর বর্তমান করোনাকালে তো হাত ধোয়া একটি অত্যাবশ্যকীয় জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচি।
২০০৮ সালে সুইডেনের স্টকহোমে বিশ^ পানি সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং পার্টনারশিপে সর্বপ্রথম হাত ধোয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ দিনটি উদযাপন সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর দিনটি উদযাপনের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। জনসাধারণের মধ্যে হাত ধোয়ার মাধ্যমে রোগের বিস্তার রোধে সচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। প্রথমে স্কুল শিক্ষার্থীরা এ ক্যাম্পেইনের মূল টার্গেট হলেও অল্পদিনের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সব বয়সি মানুষের মধ্যে প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনাই এ ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই হাত ধোয়াবিষয়ক সচেতনতাকে কেবল একটি দিবসের সঙ্গে যুক্ত না করে সারাবছরই এর প্রচার থাকা দরকার। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য খাতে একটি উন্নয়নের পরিমাপক। সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে পারলে প্রায় ২০টি রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার
অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়েও বেশি কাজ করে। হাত ধোয়ার নিয়মও আছে; কীভাবে ভালো করে হাত ধুতে হবে। পরিষ্কার চলমান পানিতে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে কনুই পর্যন্ত সাবান মেখে কয়েক সেকেন্ড সময় ধরে হাতে হাত ঘষে ফেনা তৈরি করে আঙুলের ফাঁকে, নখের মধ্যে ও কবজিতে ভালোভাবে কচলিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
ছয় ধাপে হাত ধোয়া সম্পন্ন করলে জীবাণুমুক্ত হওয়া যায় মর্মে অভিজ্ঞজনেরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। জীবাণু কার্যকরভাবে ধ্বংস করতে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া উচিত। কারণ দুই সেকেন্ডেই হাতের সব জীবাণু চলে যায় না। তাই হাত জীবাণুমুক্ত করতে আরও কয়েকটা সেকেন্ড ব্যয় করতে হবে।
চলমান……