জাবি হলে তালা ভেঙে প্রবেশ শিক্ষার্থীদের
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি / লিগ্যাল ভয়েস টোয়েন্টিফোর :
স্থানীয়দের হামলার ঘটনার পর নিরাপদ অবস্থানের স্বার্থে আবাসিক হল খুলে দিতে প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় গতকাল সকালে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করছেন।
এর আগে সকালে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। কিন্তু প্রশাসন হল খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না জানানোয় তারা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস সংলগ্ন গেরুয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানান তারা। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রদের অন্তত চারটি মোটরসাইকেল ও গেরুয়া বাজারের বেশকিছু দোকানপাট ভাংচুর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় এবং গুরুতর আহতদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তবে গেরুয়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত কয়েকজন চাঁদা দাবি করেছিল। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। একপর্যায়ে কয়েকজন কর্মী আমাকে আটক করলে আমি স্থানীয়দের সাহায্য চাই। এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করতে এলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করা হলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।’
এ বিষয়ে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, ‘স্থানীয় একজনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাঁদা চাওয়ায় এ মারামারির সূত্রপাত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।’
ঘটনার পর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ জাবি শাখার উপদপ্তর সম্পাদক এম মাইনুল হোসেন রাজন বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। এমন ঘটনা ঘটলে স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে পারত। তা না করে তারা হামলা করেছে। এখন এ অপরাধের দায় এড়াতে তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হন। এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় গতকালের মধ্যেই হল খুলে সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার উপযুক্ত বিচার, আহত ছাত্রদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করাসহ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নেন। কিন্তু হল খোলার আশ্বাস না দেয়ায় একপর্যায়ে হলগুলোর তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে অবস্থান নেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। তবে মিছিল, জমায়েত এবং হলের তালা ভাঙাকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী হল খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থান করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ওমর সানি রাজু। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে হলে অবস্থান করা হবে। ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকাকে কোনোভাবেই নিরাপদ মনে হচ্ছে না। যেকোনো সময় স্থানীয়রা আবারো হামলা করতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা না পেলে আমরা হল খুলে দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা ছাড়া হল খুলে দেয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট। বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়।